অধ্যবসায় রচনা

অধ্যবসায়ী ব্যক্তি লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে এবং বারবার ব্যর্থতা সত্ত্বেও চেষ্টা চালিয়ে যায়। এই দৃঢ়তা তাদেরকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
oddhabosay শব্দটি সাহসী ফন্টে লেখা,

ভূমিকা

অধ্যবসায় রচনা : মানব জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য অধ্যবসায় একটি অপরিহার্য গুণ। অধ্যবসায় বলতে বোঝায় লক্ষ্য অর্জনের জন্য বারবার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। জীবনে নানা বাধাবিপত্তি আসে, কিন্তু অধ্যবসায়ী ব্যক্তি কখননো হাল ছাড়েন না। তারা তাদের লক্ষ্য স্থির রাখেন এবং নিরলসভাবে পরিশ্রম করেন। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে।

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হতে হলে অধ্যবসায় থাকা আবশ্যক। শিক্ষাজীবনে ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য, কর্মজীবনে উন্নতি লাভের জন্য, এবং ব্যক্তিগত জীবনে সুখী হওয়ার জন্য অধ্যবসায় অপরিহার্য। যে সমস্ত মানুষ নিজেদের জীবনে কিছু অসামান্য কাজ করতে পেরেছেন, তাঁদের সকলের গল্পের মধ্য়েেই আমরা এই একই গুণের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাই। তাই বলা যেতে পারে, সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার পথে অধ্যবসায়ই হল সঠিক পথপ্রদর্শক।

অধ্যবসায় উদাহরণ

ইতিহাসের পাতায় অধ্যবসায়ী ব্যক্তিদের উদাহরণে ভরা। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ছোটবেলায় স্কুলে ভালো করতে পারতেন না। কিন্তু তিনি অধ্যবসায় বজায় রাখেন এবং বারবার চেষ্টা করে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হয়ে ওঠেন। আবার ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মহাত্মা গান্ধী তাঁর সত্যাগ্রহ ও অহিংসার আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মতন শক্তিশালী শত্রুকে ঘাঁয়েল করে দিতে পেরেছিলেন। বারবার বিফল হওয়ার পরেও তিনি তাঁর লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন, এবং এই অধ্যবসায়ের গুণেই আজ তাঁকে ‘জাতির জনক’ হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমান সময়ে শারীরিক প্রতিবন্ধীতা সত্ত্বেও যেসব মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে আমাদের বিস্মিত করেন, তাঁদের উদাহরণও অধ্যবসায়ের জয়গান ছাড়া আর কিছুই নয়।

অধ্যবসায়ী হওয়ার উপায়

অধ্যবসায়ী হওয়ার জন্য কিছু কার্যকরী পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। নিম্নে আলোচনা করা হল:

লক্ষ্য স্থির করা

জীবনের লক্ষ্য কেমন হবে তা ঠিক করার ক্ষেত্রে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন বাস্তবসম্মত হয়। অর্থাৎ, কল্পনাবিলাসী ও আকাশকুসুম লক্ষ্য সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, যদি আমাদের লক্ষ্যই বাস্তবের মাটি থেকে অনেক উঁচুতে থাকে, তাহলে তা পূরণ করার জন্য মানসিক ও শারীরিক যে শ্রমের প্রয়োজন তাতে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়েন। তবে, এর অর্থ এই নয় যে লক্ষ্যকে ছোটো করে দেখতে হবে। নিজের যোগ্যতা এবং চারপাশের পরিবেশ বুঝে এমন একটা লক্ষ্য ঠিক করা উচিত যা অর্জন করা একটু কঠিন, কিন্তু চেষ্টা করলে অসম্ভব নয়।

লক্ষ্য স্থির হয়ে গেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ হল কাজে নেমে পড়া। অধ্যবসায় শব্দটির মধ্যেই আছে দৃঢ়তা, অবিচলতা – দিনের পর দিন একই লক্ষ্যে স্থির থাকার অণুপ্রেরণা।

নিয়মিত পরিশ্রমের বিকল্প নেই

অধ্যবসায়ের পরবর্তী পদক্ষেপ হল নিরলস পরিশ্রম। এটাকে আবার ‘কঠিন পরিশ্রম’ বলারও দরকার নেই, কারণ কারও কাছে একটা বিষয় কঠিন হতে পারে যেটা আরেকজনের কাছে সহজলভ্য। কিন্তু কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের মন যেকোনো কারণে বিক্ষিপ্ত হতে পারে, শরীর বিশ্রাম খুঁজতে পারে – এইসব প্রলোভনের বশবর্তী না হয়ে নিত্যদিনের কাজ নিত্যদিন সময়ে করাটাই মূলমন্ত্র। ছাত্রটির ক্ষেত্রে যেমন প্রতিদিন কমপক্ষে তিন-চার ঘণ্টা পড়াশোনা করা আবশ্যক, তেমনি যার লক্ষ্য ভালো একটা চাকরি পাওয়া, তাঁকে নিয়মিত রোজগারের বিজ্ঞাপনগুলি পড়া, ইন্টারভিউ দেওয়ার জনয় প্রস্তুত থাকা প্রভৃতি কাজ মন দিয়ে করতে হবে।

হতাশ হলে চলবে না

জীবনের পথে প্রতি পদে পদেই আমাদের নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সমস্ত পরিস্থিতি সবসময়ে আমাদের অনুকূল হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা হোঁচট খাই, এবং ব্যর্থ হই। কিন্তু এইসব ব্যর্থতাই আমাদেরকে জীবনের সঠিক পথ বাতলে দেয়, এবং আমরা আবার শক্তি সঞ্চয় করে নতুন করে লক্ষ্য অর্জনের জন্য এগিয়ে যেতে পারি। তাই হতাশা যত গভীরই হোক না কেন, অধ্যবসায়ী ব্যক্তি তা মনে স্থান দেন না। এরকম পরিস্থিতিতে আশপাশের পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবের থেকে নৈতিক সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। তবে, সবার আগে নিজের মনকেই বুঝিয়ে শান্ত করা জরুরি। ব্যর্থতা কখনই চিরস্থায়ী হয় না, একটা উপায়ে কাজ না হলে অন্য উপায়ে সাফল্য অবশ্যই আসবে — এই মন্ত্র মনে রাখলে জীবনের পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

Read More: আমার জীবনের লক্ষ্য (The Goal of My Life)

পরিশ্রমের ফল

যে ব্যক্তি অধ্যবসায়ের পথে হাঁটতে শুরু করেছে, তার কাছে সাফল্য একটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। অধ্যবসায়ী মানুষেরা যেকোনো কাজ ধৈর্য সহকারে এবং খুঁটিনাটি বিষয় লক্ষ্য করে করেন বলে তাঁরা খুব কমই ভুল করেন। এই গুণগুলি যেকোনো কর্মক্ষেত্রেই সমাদৃত এবং প্রয়োজনীয়। তাঁদের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার নতুন উদ্যমে কাজে লেগে যাওয়ার চেষ্টা তাঁদের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই স্বাভাবিকভাবেই একটা সময় তাঁরা তাঁদের নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে যান। সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যে আনন্দ পাওয়া যায় তা তুলনাহীন, এবং তাঁরা জানেন এই আনন্দের অধিকারী হতে হলে কঠোরভাবে নিজের লক্ষ্যের প্রতি দৃঢ় থাকতে হয়।

উপসংহার

অধ্যবসায় হল জীবনে সফলতার একটা চাবিকাঠি। বাস্তবে আমরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন সময়ে নিজেদের নির্ধারিত নানান লক্ষ্য পূরণের সাধনা করি। তা যত ছোট বা বড়ই হোক না কেন, অধ্যবসায় না থাকলে সফল হওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই অধ্যবসায়ী চরিত্র গঠন শিক্ষাজীবনেই শুরু করা উচিত। যে যত ছোটো থেকেই নিজেকে পরিকল্পনা মাফিক পরিচালিত করতে শেখে, তার পক্ষে ভবিষ্যতে জীবনের যেকোনো চ্্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা অনেকটাই সহজতর হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top