“পুথি গত বিদ্যা, পর হস্তে ধন/ নাহি বিদ্যা নাহি ধন, হলে প্রয়োজন। ” : ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্পসারণ

“পুথি গত বিদ্যা, পর হস্তে ধন

নাহি বিদ্যা নাহি ধন, হলে প্রয়োজন। “

মানুষের জীবন বিদ্যা ও ধন দুটোই খুব প্রয়োজন এবং মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোর জন্যে এ দুটোকে মানুষ কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা করে অর্জন করে। কিন্তু শুধু অর্জন করার মধ্যেই এ দুটোর সার্থকতা সীমিত নয়। বিদ্যা অর্জন করার পর তাকে চলমান জীবন-প্রবাহে কাজে লাগাতে না পারলে সে বিদ্যা হয়ে পড়ে অকার্যকর। আবার অর্জিত ধন-সম্পত্তি যদি প্রয়োজনের সময় কাজে না লাগে তবে সেই ধন-সম্পত্তি কষ্ট করে অর্জন করাই বৃথা।

পৃথিবীতে মানুষের জীবনে বিদ্যাশিক্ষা ও ধন-সম্পত্তি অর্জনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বইয়ে বিদ্যা সঞ্চিত থাকে, মানুষ চর্চার মাধ্যমে তাকে আত্মস্থ করে। বিদ্যা অর্জন করতে হলে মানুষকে পরিশ্রম করতে হয়, সাধনা করতে হয়। কিন্তু কেউ যদি রাশি রাশি বই-পুস্তক কেবল তোতাপাখির মতো মুখস্ত করে তবে সেই পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন নিরর্থক। আবার অর্জিত বিদ্যা যদি মানব কল্যাণে কাজে না লাগে তবে তাও সার্থক হয় না। মলাটবদ্ধ নির্জীব বিদ্যাকে আত্মস্থ করে মানুষ তার মনোজগতের দ্বার উন্মোচন করে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। এর দ্বারাই মানুষ দেশ ও দশের কল্যাণে ব্রতী হয়। বিদ্যা অর্জন করে শুধু পৃথিবী জোড়া খ্যাতি লাভ করে কিংবা পণ্ডিত জ্ঞানী বলে পরিচিত হলে সে বিদ্যারও কোনো সার্থকতা নেই। বরং অর্জিত বিদ্যার দ্বারা মনুষ্য জগতের কল্যাণ সাধনা করলে, সে বিদ্যাকে আগামী প্রজন্মের জন্যে সুন্দর পৃথিবী গড়ার কাজে লাগালে তবেই বিদ্যা অর্জন সার্থক হয়। বিদ্যা অর্জনের মতো ধন উপার্জনের জন্যেও মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ অনেক ধন-সম্পত্তির মালিক হয়। কিন্তু কেউ যদি তার বিপুল অর্থবিত্তকে মানুষের কাজে ও জগতের কল্যাণে ব্যবহার করতে না পারে, কৃপণের মতো সেই সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখে তার উপযোগিতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ না দেয় কিংবা সেই অর্থ প্রয়োজনের সময় কাজে না লাগিয়ে অন্যের কাছে গচ্ছিত রেখে দেয় তবে সেই অর্থ-সম্পদ মানুষের কাছে হয়ে পড়ে অর্থহীন। সুতরাং সার্থক ও সুন্দর জীবনের জন্যে বিদ্যাকে বুদ্ধি দ্বারা আত্মস্থ করে বাস্তবের সঙ্গে সংযোগ করা দরকার এবং ধন-সম্পত্তি অন্যের কাজে অহেতুক গচ্ছিত না রেখে দেয় তবে সেই অর্থ-সম্পদ মানুষের কাছে হয়ে পড়ে অর্থহীন। সুতরাং সার্থক ও সুন্দর জীবনের জন্যে বিদ্যাকে বুদ্ধি দ্বারা আত্মস্থ করে বাস্তবের সঙ্গে সংযোগ করা দরকার এবং ধন-সম্পত্তি অন্যের কাজে অহেতুক গচ্ছিত না রেখে নিজের আয়ত্তে রাখা দরকার, যেন প্রয়োজনের সময় নিজের কাজে লাগানো যায় বা অন্যকে সাহায্য করা যায়।

বিদ্যা ও ধনের সার্থকতা নির্ভর করে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর ওপর। মানুষের প্রয়োজনে না লাগলে এ দুটোরই কোনো মূল্য নেই। তাই বিদ্যা ও ধনকে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব সম্পদ হিসেবে অর্জন করে কাজে লাগাতে হবে।

অন্যান্য বই থেকেও সংগ্রহ করা ভাবসম্প্রসারণ।

পুথিগত বিদ্যা থেকে অনেক কিছু শেখা যায়,কিন্তু তা সকল জ্ঞানের আধার নয়।যেমন কবি বলেন,”পুথিগত বিদ্যা,পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন”

পুথি গত বিদ্যা বলতে বইয়ে ছাপানো জ্ঞানকে বোঝানো হয়।এই জ্ঞানের মধ্যে ধর্ম, রাজনীতি, সমাজনীতি, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় থাকে যা ব্যবহারিক ভাবে বা বাস্তবে দেখিয়ে দেখিয়ে শেখানো হয় না। অর্থাৎ পুথিবিদ্যা অর্জন করার পর তার সঠিক প্রয়োগ জানতে হয়,আর এর উপর এর সাফল্য নির্ভর করে।যেমনঃএকজন গাড়ির বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে ও এর খোলা -বাধা এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সম্পর্কে শিখল।এখন সে যদি শেখার সাথে সাথে তা বাস্তবে প্রয়োগ না করে, তাহলে কিছুদিন পর তার অর্জিত এই জ্ঞান তার স্মৃতি থেকে চলে যাবে। ফলে একদিন যখন তার গাড়ি বা অন্যের গাড়ি ঠিক করতে যাবে -তখন সে কিছুই পারবে না। অর্থাৎ তার অর্জিত পুথিগত বিদ্যা সঠিক প্রয়োগের

অভাব অর্থহীন বোঝার মতো হয়ে পড়ে।অন্যদিকে, যখন একজন ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে, তখন তাকে প্রয়োগের বিষয়টি আলাদা করে শিখতে হয় না। কেননা এতে বাস্তবে প্রয়োগ করে শেখানো হয়।যেমন:একজনকে তার বাবা কীভাবে ধানের বীজতলা তৈরি করতে শেখাল। এই যে শিক্ষা এতে পুথিবিদ্যার মতো theoryশেখানো হয়নি, বরং বাস্তবে প্রয়োগ করে শেখানো হয়েছে।এত যতদিন যাবে যাক সে কোন দিন এই বীজতলা তৈরী ভুলবে না।

সুতরাং পুঁথিগতবিদ্যার চেয়ে ব্যবহারিক বিদ্যা অত্যাবশ্যাক।

অন্যান্য বই থেকেও সংগ্রহ করা ভাবসম্প্রসারণ

ব্যবহারিক জীবনে বিদ্যা এবং ধনকে যদি কোন কাজে লাগানো না যায় তবে সে বিদ্যা এবং ধন অর্থহীন হয়ে পড়ে।

বিদ্যার কোন কেনা-বেচা নেই বলে ইহা অমূল্য সম্পদ। মানুষ নিজের এবং পরের উপকার সাধনের জন্যই বিদ্যা অর্জন করে। প্রয়োজনের সময় এ অীর্জত বিদ্যা যথাযথ কাজে লাগাতে না পারলে তখন এটি সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে পড়ে। মুখস্থ বিদ্যা অর্থাৎ পুঁথিগত বিদ্যা কারো যেমন উপকারে আসে না তেমনি অন্যের হস্তগত ধনও নিজের কোন উপকারে আসে না। পরের হাতে নিজের উপার্জিত অর্থ রাখলে তা ঠিকমত পাওয়া যায় না। তখন এ উপার্জিত ধনও পুঁথিগত বিদ্যার ন্যায় অর্থহীণ হয়ে পড়ে। তাই যে কোন প্রয়োজন সাধনের জন্য বিদ্যা ও ধন একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু সে প্রয়োজন যখন সাধিত হয় না, তখন এর কোন মূল্যও থাকেনা। পৃথিবীতে মানুষের একমাত্র ভেলা অর্থাৎ অবলম্বন হচ্ছে আশা। আশা আছে বলেই তো মানুষ বেঁচে আছে।

গ্রন্থগত বিদ্যা এবং পরহস্তে ধন জীবনের প্রয়োজনীয় সময়ে ব্যবহৃত হয় না, বিধায় এগুলো প্রকৃতপক্ষে কোনো বিদ্যা বা ধন নহে। তাই এই বিদ্যা এবং ধনকে মানুষের নিজস্ব সম্পদ করে অর্জন করতে হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top