প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না : ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্পসারণ

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না (Answer – 1)

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না : কেবল প্রাণের অধিকারী হওয়াই মনুষ্যত্বের লক্ষণ নয়। কেবল প্রাণের অস্তিত্বের নিরিখে দেখলে মানুষ সকল কীটপতঙ্গ ও জীবজন্তুর সমগোত্র। পক্ষান্তরে বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন সংবেদনশীল মনের অধিকারী হতে পারলে মানুষ প্রাণীগোত্রের সীমা ছাড়িয়ে মানুষের মর্যাদায় অভিষিক্ত হতে পারে।

বিশ্বপ্রকৃতিতে জড়বস্তুর সঙ্গে প্রাণীর পার্থক্য প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে। আবার প্রাণীজগতে পশুপাখি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি পার্থক্য থাকলেও প্রাণের অধিকারী বলে সবাই প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রাণের অধিকারী মানুষ এই প্রাণীকুলের সদস্য হলেও প্রাণীকুল থেকে আলাদা। অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের পার্থক্যের মূলে রয়েছে মানুষের মনোজগতের বৈশিষ্ট্য। মানুষ প্রাণী হিসেবে সহজাত কিছু গুণ নিয়ে জন্মায়। কিন্তু সেই সহজাত গুণে আবদ্ধ থাকলে মানুষ প্রাণীজগতের গণ্ডিতেই নিজেকে আবদ্ধ রাখতে বাধ্য। কিন্তু মানুষ শিক্ষা, সাধনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে মানবিক গুণাবলি আয়ত্ব করেই সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠে। তখন অন্যান্য প্রাণী থেকে সে হয়ে যায় আলাদা। সত্যিকারের মানুষ চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান-বুদ্ধি, আবেগ-অনুভূতির অধিকারী, বিবেক-বোধ পরিচালিত সত্তা। ব্যক্তিত্বের, মননশীলতার ও মনুষ্যত্বের শক্তিতেই সে মানুষ। যে কেবল মানুষের আকৃতি নিয়ে পশুর মতো কাজ করে, পশুসুলভ আচরণ করে, যার মধ্যে মানবতাবোধ, সত্যনিষ্ঠা, ঔদার্য, সৎবিবেচনাবোধ, বিবেক-বুদ্ধি ইত্যাদি নেই তাকে সত্যিকার অর্থে মানুষ বলা যায় না। অন্যান্য প্রাণীর মতো সে প্রাণী বটে, কিন্তু তাকে মানুষ বলা চলে না। মানুষ কেবল প্রাণের অধিকারী নয়, মনেরও অধিকারী। সে মন অন্যকে ভালোবাসে, অন্যের ভালোবাসা পেতে চায়। সে মন পবিত্র, সকল কলুষ থেকে মুক্ত। তাই মানুষ হতে হলে কেবল প্রাণ থাকলে চলবে না, মানুষকে হতে হবে সুন্দর, সুস্থ ও মানবিক গুণাবলিসম্মন্ন মনের অধিকারী।

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না (Answer – 2)

মূলভাব : প্রাণ আছে তাকেই প্রাণী বলা হয়। এক্ষেত্রে মানুষেরও প্রাণ আছে। কিন্তু মন না থাকলে তাকে মানুষ বলা যাবে না। মানুষ হতে হলে তাকে অবশ্যই উন্নত মনের অধিকারী হতে হবে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের কতিপয় মহৎ গুণাবলির জন্য সে ‘মনুষ্য’ পদবাচ্য, কিন্তু অন্য প্রাণীর বেলায় তা খাটে না। মানুষকে নিজের পরিচয় দানের জন্য এমন কতিপয় গুণের অধিকারী হতেই হয় যা অন্য প্রাণীর বেলায় সম্ভবপর না। শুধু প্রাণ আছে বলে সে মানুষ নামের যোগ্য নয়; মানুষের ন্যায় অন্য প্রাণীরও প্রাণ আছে। সুতরাং, প্রাণের ক্ষেত্রে মানুষ এবং অন্য প্রাণীর মধ্যে কোন প্রভেদ নেই। পৃথিবীতে অন্যান্য যেসব প্রাণী আছে তারা প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মগ্রহণ করে ও পূর্ণতা পায়। বলাবাহুল্য, সেই পূর্ণতা লাভের ব্যাপারে তাদের কোন যত্ন করতে হয় না, সাধনা ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয় না। অথচ মানুষের বেলায় এর ঠিক বিপরীত। মানুষের এমন কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে সেগুলি অন্য প্রাণীর মধ্যে দেখা যায় না। মানুষের সঙ্গে প্রাণীর পার্থক্যটা সহজেই বুঝতে পারা যায়।

মানুষের বিবেক আছে, বুদ্ধি আছে, সে ন্যায়-অন্যায় বুঝতে পারে যা অন্য প্রাণী পারে না। মানুষ মহৎ গুণাবলির অধিকারী বলে তার পক্ষে এমন সব কাজ করা সম্ভব যা অন্য কোন প্রাণীর পক্ষে সম্ভবপর নয়। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধাপে ধাপে মানুষের মানসিক বৃত্তির বিকাশ ঘটে, ফলে সে মর্যাদার অধিকারী হয়। কাজেই বলা যায়, কেবল প্রাণ নয় মনই মানুষকে মানুষের পরিচয়ে চিহ্নিত করে। তাই প্রাণ নয় বরং মনই মানুষকে মানুষের পরিচয়ে পরিচিত করে তোলে।

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না (Answer – 3)

মূলভাব: সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হলো মানুষের একটা সুন্দর মন আছে, যা অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে নেই। মনের বৈশিষ্ট্যের জন্য মানুষ প্রাণীদের থেকে আলাদা।

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে যাদের প্রাণ আছে তারা সবাই প্রাণী। যেমন গাছপালা পশুপাখি সবারই প্রাণ প্রাণ আছে তাই সবাই প্রাণী। এই দিক থেকে বিবেচনা করলে মানুষ আর দশটা প্রাণীর মতই একটা প্রাণী। কিন্তু অন্য প্রাণীর থেকে মানুষের পার্থক্য আছে। মানুষ তার মহৎ গুণাবলী জন্য সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে বিবেচিত। মানুষের মনের যে বিশেষ সত্তাটি আছে তা এই পার্থক্যের কারণ। মানুষের যে মন আছে অন্য প্রাণীর মধ্যে এই মনের পরিচয় স্পষ্ট নয়। মন আছে বলেই মানুষের মধ্যে প্রেম আছে, কল্পনা আছে, ধর্ম আছে।

মানুষের মন আছে বলেই তার থেকে সে চিন্তা ভাবনা, বুদ্ধি, জ্ঞান , আবেগ-অনুভূতি ইত্যাদি প্রকাশ করতে পারে কিন্তু অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। মানুষের যা কিছু গুণাবলী আছে তার ভিত্তি তার মন। এই মন থেকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটেছে। তাই সকল প্রাণীর উপরে মানুষের স্থান ও মর্যাদা। যে কেবল মানুষের আকৃতি নিয়ে পশুর মত কাজ করে পশুসুলভ আচরণ করে যার মধ্যে মানবতাবোধ, সত্যনিষ্ঠা ,বিবেক-বুদ্ধি ইত্যাদি নেই তাকে সত্যিকারের মানুষ বলা চলে না । তাই মানুষ হতে হলে শুধু প্রাণ থাকলে চলবে না, তার সাথে একটা সুন্দর মন থাকতে হবে।

মানুষ হিসেবে অর্জন করতে হবে সমস্ত মানবীয় গুণাবলী। মানুষ আজ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত। একটা পশুর প্রাণ আছে, কিন্তু সে মানুষের থেকে আলাদা। মানুষ যেমন তার নিজস্ব ভালো-মন্দ, বুদ্ধি-বিবেক, সত্যনিষ্ঠা মানবতাবোধ ইত্যাদি বুঝতে পারে কিন্তু একজন পুশুর পক্ষে তা সম্ভব না । প্রাণের দিক দিয়ে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে কোনো রকম পার্থক্য নেই। কিন্তু মানুষের মধ্যে কতগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, যা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে লক্ষণীয় নয়।

এখানেই মানুষের সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীর পার্থক্য। মনের বিকাশ সাধনের মাধ্যমে যথার্থ মানুষের মর্যাদা লাভ করা যায়; কিন্তু প্রাণীদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। মন বা বিবেক এমন এক অমূল্য সম্পদ, যার প্রভাবে মানুষ প্রাণী হয়েও মানুষ নামে পরিচিত এবং প্রাণীর শুধু প্রাণ আছে বলেই তারা প্রাণী। পক্ষান্তরে মানুষ যখন তার বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে তখন সে যতই মানুষ হোক না কেন নেমে আসে পশুদের কাতারে।

মন্তব্য: উপরের আলোচনায় আমরা বলতে পারি যে, প্রাণ থাকলে প্রাণী হওয়া যায় কিন্তু মন না থাকলে সত্যিকার অর্থে মানুষ হওয়া যায়না। তা না হলে মানুষ এবং পশু পাখির মধ্যে কোন পার্থক্যই থাকতো না। মানুষ ও প্রাণী পশু-পাখিও প্রাণী কিন্তু মানুষের সুন্দর একটা মন আছে যা পশুপাখির থেকে আলাদা।মনের বিকাশ সাধনের মাধ্যমে যথার্থ মানুষের মর্যাদা লাভ করা যায়; কিন্তু প্রাণীদের পক্ষে তা সম্ভব নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top