ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ছাত্র সমাজের দায়িত্ব ( The Responsibility of the Students in the Economic Development of India)

অধ্যায়নই ছাত্রসমাজের একমাত্র তপস্যা নয়। শুকনো পুঁথির বিদ্যাভাসের পাশাপাশি তাদের মনুষ্যত্বের উদ্বোধিত হতে হয়। দেশের, সমাজের ,জাতির আশা-ভরসার ভবিষ্যৎ তারাই। তারুণ্যের দুর্বার জীবন বন্যায় ঝর্ণার চঞ্চলতা ঝঞ্ঝার উদ্দাম নিয়ে কাঁচা সবুজ মনে ভালোবাসার স্বর্গ রচনা করে তারা দেশ সেবায় ব্রতী হয়।

ঐতিহাসিক পটভূমি

অধ্যায়নই ছাত্রসমাজের একমাত্র তপস্যা নয়। শুকনো পুঁথির বিদ্যাভাসের পাশাপাশি তাদের মনুষ্যত্বের উদ্বোধিত হতে হয়। দেশের, সমাজের ,জাতির আশা-ভরসার ভবিষ্যৎ তারাই। তারুণ্যের দুর্বার জীবন বন্যায় ঝর্ণার চঞ্চলতা ঝঞ্ঝার উদ্দাম নিয়ে কাঁচা সবুজ মনে ভালোবাসার স্বর্গ রচনা করে তারা দেশ সেবায় ব্রতী হয়। বাঁধ ভাঙা আবেগে মথিত করে দু’পায়ের দলে যায় যত কুপ্রথা, কুসংস্কারের বন্ধন, যত শৃংখল। উচ্ছৃঙ্খলাতায় নয় বরঞ্চ নবদীক্ষিত শৃঙ্খলায় ছাত্রসমাজ আর্তের ত্রাণে ,সমাজের কল্যাণে, দারিদ্রের অভিশাপ মোচনে তৎপর হয় ।

স্বাধীনতা লাভের পর পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কর্মযজ্ঞ আরম্ভ হয়। সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে রাষ্ট্র স্থাপনের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তার পটভূমি রচনার জন‍্য অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ঘোষিত লক্ষ্য ছিল। কিন্তু ন’টি পরিকল্পনা শেষ হওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য ‌ক্রমবর্ধমান, গ্রামাঞ্চলের দুস্তর জনসাধারণের দারিদ্র্যের লাঘব হয়নি। তারা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই আছে। গ্রাম ও শহর অঞ্চলের ন্যূনতম পরিমাণ ক্যালরির খাদ্যগ্রহণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিকর খাদ্য, সাক্ষরতা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্য ও সেবার লাভের সুযোগ সুবিধা ইত্যাদিকে মানদন্ড রূপে গ্রহণ করে বিভিন্ন সময়ে যে সমস্ত সমীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে ভারতের বিপুলসংখ্যক জনসাধারণের শোচনীয় দুর্গতির চিত্রটি বারবার উদঘাটিত হয়েছে।

ভারতবর্ষের বিভিন্ন সমস্যা ও তাদের সমাধান

বর্তমানে দশম পরিকল্পনাকালে ও আমাদের এই সত্য স্বীকার করতে হয়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও তার বাস্তব রুপায়ণের মধ্যে অসঙ্গতি বারবার দেখা দিচ্ছে ।আমরা দেশ উন্নয়নকে সরকারের শাসন বিভাগ গুলোর কার্যকলাপের গন্ডিতে আবদ্ধ করে রেখেছে, জনসাধারণকে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করতে পারেনি। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন যে শুধু অর্থ বিনিয়োগ ও সরকারি কাজের ব্যাপার নয়, একটি মহৎ জাতীয় কর্তব্য ,এই বোধ সমাজের সর্বস্তরে এখনো পর্যন্ত সঞ্চারিত হয়নি । আমাদের দেশের অনগ্রসরতার অভিশাপ মোচনে প্রতি গোষ্ঠীর প্রত্যেক নারী পুরুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। এ ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অফুরন্ত প্রাণশক্তি, দুর্দমনীয় সাহসও আবেগ-অনুভূতির সজীবতাই তাদের সব থেকে বড় মূলধন।

দেশ উন্নয়নে ছাত্র সমাজের ভূমিকা

অধ্যায়নই ছাত্র দের তপস্যা একথা সত্য সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু নিজেদের পড়াশোনার গন্ডিটুকুতে আবদ্ধ থাকতে পারে না। তারা ভবিষ্যৎ নাগরিক, নাগরিকতা দায়-দায়িত্ব সম্বন্ধে তাদের ছাত্রজীবনেই সচেতন হতে, নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী তার কোন কোন দিক পালন করতে হবে।

আমাদের দেশের জনসাধারণের একটি বিরাট অংশ এখনো নিরক্ষর। নিরক্ষরতার জন্যেই তারা দেশের এবং তাদের নিজেদের জীবনের অগ্রগতি প্রতিবন্ধক অনেক অন্ধ সংস্কার বিশ্বাস লালন করে চলে, এমন কি মারাত্মক ব্যাধি সংক্রমণ হলেও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার সুযোগ গ্রহণ করতে চায় না, স্বাস্থ্যরক্ষার প্রাথমিক বিধি গুলি সম্পর্কে উদাসীন থাকে, নিজেদের অধিকার গুলি ও বুঝে নিতে পারে না। জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি। নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রছাত্রীরা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে।

দীর্ঘ ছুটির দিনগুলোতে তারা যদি গ্রামাঞ্চলে নিরক্ষর নারী-পুরুষদের জন্য নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্য রক্ষা বিধির শিক্ষা দেয় তবে দেশের খুব বড় রকমের একটা কাজ হয়। সকল সময়েই সরকারি প্রচেষ্টার মুখাপেক্ষী না হয়ে থেকে ছোটখাটো রাস্তাঘাট সংস্কার. আগাছা, পুকুরে কচুরিপানা পরিষ্কার, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কাজে ছাত্রসমাজ অগ্রণী হয়ে দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করে তুলতে পারে। ভারতবর্ষে বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতা, প্রাদেশিকতা, বর্ণবিদ্বেষ, জাতীয় স্বার্থ ও দেশের উন্নয়নের দিক থেকে অত্যন্ত ক্ষতিকর অশুভ শক্তি রূপে দেখা দিয়েছে ।ছাত্রদের জাতীয় সংহতি সাধনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হয়।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের পূর্বে বহু তরুণ ছাত্র তার ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে পরবর্তী জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ ইত্যাদি অবহেলাভের ত্যাগ করে দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। ছাত্র সমাজকে শুধু নিজেদের শিক্ষাও ব্যক্তিগত পারিবারিক স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চলবে না, সেই দেশাত্মবোধের উত্তরাধিকার অর্জন করতে হবে দেশে উন্নয়নের কাজগুলোকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে। দেশবাসীদের দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত কারে নিমজ্জিত রেখে পরীক্ষার সাফল্য এবং চাকরি জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ কে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য করে তুললে তারা চরম ভুল করবে। সেই স্বার্থপরতার কঠিন প্রায়শ্চিত্ত একদিন সকলকেই করতে হবে রবীন্দ্রনাথের এই বাণীর সভ্যতা অমোঘ ও নিষ্ঠুর আঘাত করে একদিন দেখা দেবেই –

‘পশ্চাতে ফেলিছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে’।

উপসংহার

প্রকৃত বাস্তবের দেশকে উন্নত করতে হলে সর্বপ্রথম দেশের অশিক্ষা কে দূর করতে হবে। অশিক্ষিত বিতাড়িত হলেই তার একান্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী কুপ্রথা, বঞ্চনা ,বর্ণবিদ্বেষ দূরীভূত হবে । দেশের বা সমাজের উন্নতির পথে সর্বপ্রধান এই বাধা গুলি দূর করতে পারে দেশের ভবিষ্যত কান্ডারী – ছাত্রসমাজ। পাশ্চাত্য দেশগুলির উন্নতিতে তাদের দেশের ছাত্র সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। ছাত্ররাই সমাজে অজ্ঞতার অন্ধকার মোচন করে শৃঙ্খলা এনে নতুন শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক কর্মে নতুন আশায় উদ্দীপনায় দেশোন্নয়ন করতে পারে। নতুন রক্তের তেজে নিঃসার্থ মনস্কতায় তেজি ঘোড়ার মতো টেনে নিয়ে যেতে পারে নব প্রগতির রথ।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top