চরিত্র গঠনে খেলাধূলার ভূমিকা (The Role of Sports in Character Formation)

' সুস্থ দেহে সবল মনের বাস।' তাই আমাদের প্রতিটি দিনকে সুন্দর করে তোলার জন্য দেহকে নিরোগ করে তুলতে হবে। এই কারণে প্রতিটি মানুষকে শরীর সম্পর্কে সচেতন করে তোলা দরকার। দেহগঠন ও মনের বিকাশে খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

“চাই বল, চাই স্বাস্থ্য
আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু,
সাহস বিস্তৃত বক্ষপট।”
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা:-

‘ সুস্থ দেহে সবল মনের বাস।’ তাই আমাদের প্রতিটি দিনকে সুন্দর করে তোলার জন্য দেহকে নিরোগ করে তুলতে হবে। এই কারণে প্রতিটি মানুষকে শরীর সম্পর্কে সচেতন করে তোলা দরকার। দেহগঠন ও মনের বিকাশে খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

স্বাস্থ্য ও মনের বিকাশে খেলাধূলার ভূমিকা:-

দেহ সুস্থ রাখতে খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা যথেষ্ট। শুধুমাত্র ছাত্রকালীন অবস্থায় দেহ সুস্থ রাখা প্রয়োজন নয়, কর্মজীবন এবং পারিবারিক জীবনেও সুস্থ সবল দেহের প্রয়োজন। আমরা দেখি যে, অনেক ছেলে-মেয়ের বিদ্যাবুদ্ধি যথেষ্ট থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার জন্য পারিবারিক জীবেন এবং কর্ম জীবনে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা তাদের জীবনে নিয়ে আসে নৈরাশ্য। তাই প্রতিটি জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য চাই সুস্থদেহ। পড়াশোনার মধ্য দিয়ে ছাত্রদের শুধুমাত্র বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটিয়ে জীবনে পরিপূর্ণতা আনা অসম্ভব।

খেলাধূলায় দৈহিক উৎকর্ষ সাধনের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক উৎকর্ষও সাধিত হয়। রুগ্ন ও জীর্ণদেহ যে কোন কাজের পক্ষেই অনুপযুক্ত। শরীর সুস্থ্য ও সবল না থাকলে মনও সুস্থ সবল থাকে না। ফলে মনোযোগ সহকারে কোন কাজ করা সম্ভব হয় না। কাজে অনীহা ও অলস্য দেখা যায়। তাই মনের বিকাশে ও আনন্দ দানের জন্য প্রয়োজন আনন্দের খোরাক। আর মানুষকে পরিপূর্ণভাবে নির্দোষ আনন্দ দান করতে পারে একমাত্র খেলাধূলাই।

চরিত্রগঠনে খেলাধূলা:-

দলগত খেলাগুলি খেলার সময় সহযোগিতা, সহমর্মিতা,সম্প্রীতি প্রভৃতির মাধ্যমে গড়ে ওঠে ‘ টিম স্পিরিট ‘। খেলোয়াড়দের মনে সুগঠিত হয় এক কার্যকরী আত্মীয়তাবোধ। সাম্প্রদায়িকতা, বিভেদ,বৈচিত্র,ধর্ম সবকিছুকে ভুলে তারা মেতে ওঠে আনন্দের উৎসবে। প্রগাঢ় হয় সংহতি, সম্প্রীতি, ঐক্য, জাতীয়তাবোধ ও সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন। এরই প্রভাবে মানব চরিত্র সংকীর্ণতার আবরণ ছিন্ন করে আরোহন করে মানবিকতার অনল শিখরে।

জাতীয়তা ও আন্তর্জাতিক বোধের বিকাশ:-

বর্তমানে খেলাধূলার উদ্দেশ্য ব্যাপকতর। শুধুমাত্র ব্যক্তিজীবনকে নয়, জাতীয় জীবনকে জাগ্রত করাও খেলাধূলার লক্ষ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সমস্যাকে দূরীভূত করার অন্যতম মাধ্যম হল খেলাধূলা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বর্তমানে হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা প্রভৃতি দেখা দিয়েছে এবং তা অনেকাংশে দূর করা সম্ভব খেলাধূলার মাধ্যমে। খেলাধূলা শুধু দেশের সমস্যা সমাধানে নয় আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার সহায়ক |

শিক্ষা ক্ষেত্রে খেলাধূলা:-

‘ছাত্রনাম অধ্যয়নং তপঃ।’—

অধ্যায়নই ছাত্রদের তপস্যা। এই তপস্যায় সিদ্ধি লাভের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিদ্যালাভ ও খেলাধুলা পরস্পরের পরিপূরক। খেলাধুলার দ্বারা শরীরচর্চা হয় শরীর যদি না সুস্থ থাকে তাহলে মনও ভালো থাকেনা। আবার বিদ্যালাভের সঙ্গে মনের নিবিড় সম্পর্ক আছে। বিক্ষিপ্ত ও বিশৃঙ্খল মন নিয়ে কেউ পড়াশোনা করতে পারে না। মনের সম্পূর্ণ বিকাশে ও বিদ্যালাভের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের কখনোই পড়াশোনা ত্যাগ করে খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকা উচিত নয়—-

‘Play while you play read while you read’.

– এই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

ভারতের খেলাধুলার চিত্র:-

দুঃখের বিষয় আমাদের দেশ ভারতবর্ষে খেলাধুলার চিত্র বড়োই করুণ। অধিকাংশ স্কুল-কলেজে শরীরচর্চার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। এর কুফল আমরা ভোগ করছি ।আমাদের দেশের প্রায় অধিকাংশ তরুণ-তরুণী অস্বাস্থ্যের অধিকারী ,অপুষ্টি জনিত রোগের শীর্ণ। তবে ভারতের মতো দরিদ্র দেশে দেহকে সুস্থ রাখার বহু বাধা বিঘ্ন। ক্ষুদার খাদ্য টুকু অধিকাংশ দেশবাসীর কাছে অামিল। খেলাধুলাকে প্রয়োজনীয় কথামৃত উপহাস বলে প্রতিত হয়। ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতার চিত্র বড় করুন। অলিম্পিক ক্রীড়া ক্ষেত্রে আমাদের শোচনীয় পরাজয় ভারতের শক্তি-সামর্থের দুরাবস্থা কে করেছে প্রকট। তবে সাম্প্রতিকতম কালে ভারত কমনওয়েলথ গেমস এশিয়াড প্রভৃতি ক্রীড়া ক্ষেত্রে কিছুটা আধিপত্য বিস্তার করেছে। তবে খেলাধুলার সামগ্রিক উন্নতির জন্য সরকার তথা প্রতিটি দেশবাসীর প্রচেষ্টা থাকা উচিত। খেলোয়াড়দের মনের বিভিন্ন কুপ্রবৃত্তি গুলি, যেমন – নিষিদ্ধ ড্রাগ নিয়ে অসৎ উপায়ে খেলাধুলায় বিজয়ী হওয়ার মানসিকতা দূর করতে হবে। ক্রীড়া জগতে যেন কোনোভাবেই কলুষিত হয়ে না ওঠে, সেদিকে নজর রাখতে হবে প্রতিটি দেশবাসীকেই।

উপসংহার:-

পরিশেষে বলা যায় জীবনের উন্নতির সোপান হলো খেলাধুলা।

‘ We shall be nearer to heaven through football than through Gita’

– বিবেকানন্দের এই উক্তি থেকে আমরা খেলাধুলার গুরুত্ব সম্যক উপলব্ধি করতে পারি। ছাত্র সমাজের সার্বিক বিকাশ তথা দেশের উন্নতির জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় মুখ রেখে আধুনিক পৃথিবীতে অংশগ্রহণ করা যায় না। তাই ভবিষ্যৎ পৃথিবী কে ব্যাধিমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রানবন্ত ও দৃঢ় চরিত্রের যুবসমাজ। আর এর জন্য প্রয়োজন খেলাধুলা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top