প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান (Science in Everyday Life)

ভূমিকা:-

বর্তমান যুগ হলো বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান লক্ষ্মী অকৃপণ দানে গুহাবাসী, অসভ্য, নগ্ন মানুষ আজ উন্নতির শিখরে উন্নীত হয়েছে। বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে মানুষ উন্মোচন করেছে প্রকৃতির রহস্য। বিজ্ঞান গুড়িয়ে দিয়েছে ভ্রান্ত কুসংস্কার। মানুষকে করে তুলেছে যুক্তিবাদী।

বিজ্ঞানের ইতিহাস :

বিজ্ঞানের সূচনা সুপ্রাচীন কালে। পাথর ঠুকে মানুষ আগুন জ্বালাতে শেখাই হল সূত্রপাত। আজ এক বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের কম্পিউটার পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন অবদানে উপকৃত হয়েছে মানব সমাজ। তবে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে অষ্টাদশ শতকের শিল্প বিপ্লবের পর থেকে।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান :

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান প্রতিটি ক্ষেত্রেই। ভোরে ঘড়ির শব্দে ঘুম থেকে ওঠা, বৈদ্যুতিক চুল্লীতে তৈরি চাও খাবার খাওয়া, সাইকেলে বা গাড়িতে চড়ে বিদ্যালেয় যাওয়া, সেখানে ক্লাসরুমে নানা উপকরণ, বাড়িতে ফিরে টি.ভি দেখা বা গান শোনা, পাখা চালিয়ে ঘুমানো এসব প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের অবদান সুস্পষ্ট।

শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞান :

শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞান দেবীর অকৃপণ দান। বিজ্ঞানের অবদানেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প থেকে গড়ে উঠেছে বৃহৎ ইঞ্জিনিয়ারিং, লৌহ-ইস্পাত শিল্প। কারখানার যন্ত্রগুলির দানবীয় বল ও ক্রিয়া-কলাপ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হয় না।

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান :

কৃষিক্ষেত্রে এখন মান্ধাতার আমলের লাঙ্গল, গরুর ব্যবহার কমে গেছে। বিজ্ঞানের কৃপায় এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার প্রভৃতি আধুনিক যন্ত্রপাতি। অধিক ফলনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে নিত্যনতুন উন্নতমানের বীজ এবং কৃত্রিম সার |

চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিজ্ঞান :

চিকিৎসাবিজ্ঞানও আজ অতি উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এক্সরে, আলট্রা সনোগ্রাফ,ই.সি.জি,সি.টি স্ক্যান প্রভৃতির মাধ্যমে যেমন অতিদ্রুত রোগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে তেমনই আবার উন্নত ঔষধ, বিভিন্ন তরঙ্গ রশ্মি এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করা হচ্ছে।

যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

দূরকে বিজ্ঞান করেছে নিকট। টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স প্রভৃতির মাধ্যমে হাজার মাইল দূরেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে।

বিজ্ঞান ও বিনোদন:

মানুষের বিনোদনেরও ব্যবস্থা বিজ্ঞান করেছে । বিভিন্ন খেলাধুলায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি বিজ্ঞানেরই অবদান। এছাড়া রেডিও, টেলিভিশন প্রভৃতি মানুষের অবসর বিনোদনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। বর্তমানে স্যাটেলাইট সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলন ঘটেছে।

পরিবহন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

মানুষ এবং মাল পরিবহনের জন্য বিজ্ঞান দিয়েছে বাস, ট্রাক, ট্রেন, উড়োজাহাজ প্রভৃতি। এছাড়া হেলিকপ্টার, যুদ্ধজাহাজ প্রভৃতি দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করেছে।

কম্পিউটার:

বিজ্ঞানের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অবদান বলতে গেলে কম্পিউটার। বর্তমানে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে কম্পিউটারের ব্যবহার নেই। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, শিল্প, সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার।

অপব্যবহার:

বর্তমান বিশ্বে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠী বিজ্ঞান এবং এর দানকে অপব্যবহার করছে। তৈরি করছে নানা রকম বিস্ফোরক এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম। আবিষ্কৃত হয়েছে পারমাণবিক বোমা যা প্রথমে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হত কিন্তু এখন তা মারণাস্ত্রে পরিণত হয়েছে। এসব অস্ত্রাদি বিজ্ঞানেরই দান। এসব হাতিয়ারকে কেন্দ্র করে সূত্রপাত বিচ্ছিন্নতাবাদের।

উপসংহার:

কোন বিষয় এর সুফল এবং কুফল নির্ভর করে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহারকারীর ওপর। বিজ্ঞানের উপকারী দিক বিস্তৃত যার তুলনায় কুফল অতি নগণ্য। কিন্তু, মানুষ যদি এই অন্ধকারদিকের প্রতিই বেশি ঝুঁকে পড়ে তবে তো বিজ্ঞানের দোষ দেওয়া যায় না। তাই বলব, মানুষ যদি খারাপ দিকটি বর্জন করে বিজ্ঞানকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করে তাহলে বিজ্ঞান মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনবে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠবে বিজ্ঞান।

 


সমাপ্ত


x

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Related Posts
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
Scroll to Top