দেশভ্রমণ শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ

বাংলা রচনা

ভূমিকা :

মানুষের মধ্যে আদিকাল থেকেই ভ্রমণের প্রবৃত্তির রয়েছে । এক সময় পশু শিকারের জন্য মানুষ জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো। তা ছিল তার বাঁচার প্রয়োজনে ভ্রমণ । তারপর নিজের বুদ্ধি আর সাহস কে কাজে লাগিয়ে সে সেই প্রয়োজন মিটিয়েছে । কিন্তু ভ্রমণ নেশার মতো মিশে গেছে মানুষের রক্তের সঙ্গে ।

উদ্দেশ্য :

প্রাচীনকালে রাজারা রাজ্য জয়ের উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণের বেড়াতেন। বণিকেরা সমুদ্র পাড়ি দিতেন বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে । জ্ঞানান্বেষী ছাত্ররা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যেতেন এক দেশ থেকে আর এক দেশে । ধর্মপ্রচারের জন্য সাধুসন্ত্র ধর্মগুরুরা পরিব্রাজক হতেন। আবার, শুধুমাত্র অচেনাকে চিনতে, অজানাকে জানতেও মানুষ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ত । আজও নানা প্রয়োজনে জন্য তো বটেই, শুধুমাত্র নতুন দেশ দেখার আনন্দে মানুষ বেরিয়ে পড়েন ভ্রমণে ।

ভ্রমণের সেকাল ও একাল :

প্রাচীন ও মধ্যযুগে মরুপ্রান্তর, বন,পার্বত্য অঞ্চল অতিক্রম করে মানুষ পায়ে হেঁটে , ঘোড়া বা উটের পিঠে চেপে ভ্রমণে বের হতো । সমুদ্রপথে ও দেশান্তরে যেত তারা । ভারত তথা পৃথিবীর ইতিহাসে এভাবেই বিখ্যাত হয়ে আছেন মেগাস্থিনিস, ফা- হিয়েন, হিউয়েন সাঙ কিংবা মার্কোপোলো, ম্যাগেলান, লিভিংস্টোনরা । আর তাদের সেই ভ্রমণ বৃত্তান্ত হয়ে উঠেছে তৎকালীন সমাজ ধর্ম রাজনীতি ও অর্থনৈতিক ভূগোল চর্চার এক বিশ্বস্ত দলিল অজানার সন্ধানে অচেনাকে চেনা আগ্রহে মানুষের সে পথ চলা আজও থামেনি । আর তাদের সেই ভ্রমণ এর বৃত্তান্ত হয়ে উঠেছে তৎকালীন সমাজ ধর্ম- রাজনীতি- অর্থনীতি -ভূগোলচর্চার এক বিশ্বস্ত দলিল । অজানার সন্ধানে, অচেনাকে চেনার আগ্রহে মানুষের সেই পথ চলা আজও থামেনি ।

প্রয়োজনীয়তা :

বই পড়ে ছাত্রছাত্রীরা যে জ্ঞান আহরণ করে, ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে তাকেই তারা প্রত্যক্ষ করে । ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের যেমন উপলব্ধি করা যায় ইতিহাসে গাম্ভীর্যকে, তেমনি ভূগোলের নিবিড় পাঠও ঘটতে পারে প্রকৃতির সান্নিধ্যে । ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে কোন বিশেষ অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা ,সংস্কৃতি ইত্যাদির সঙ্গেও আমাদের পরিচয় ঘটে। এক অঞ্চলের মানুষ যখন অন্য অঞ্চলে ভ্রমণ করে – সেখানকার জীবন ধারার সঙ্গে পরিচিত হয় ,স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয় এক ভাবগত ঐক্য । এই ঐক্য জাতীয় সংহতির পথ প্রশস্ত করে । তৈরি হয় বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষের মধ্যে মিলনের সেতু। একঘেয়ে জীবনে দেশভ্রমণ নিয়ে আসে মুক্তির স্বাদ । ফলে নতুন উদ্দীপনা ও প্রাণ শক্তি অর্জন করা সম্ভব হয় । ছাত্র-ছাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ – সকলের পক্ষেই এর ফলে কাজকর্মে নতুন ভাবে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়। মনের বিকাশে ভ্রমণের ভূমিকা তাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ।

সাবধানতা অবলম্বন :

ভ্রমণে বেরোবার আগে বেশ কিছু সর্তকতা অবলম্বন করলে আকস্মিক বিপদ এড়ানো যায় । কোন স্থানের আবহাওয়ার পূর্বাভাস, রাজনৈতিক সমস্যা, পরিবহনব্যবস্থা , হোটেল – এসব সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নিয়ে যাত্রা শুরু করলে অনেক সুবিধা হয় ।

উপসংহার :

দেশভ্রমণ মনকে উদার ও প্রসারিত করে, গন্ডিবদ্ধ জীবনের বাইরে যে বিপুল পৃথিবী রয়েছে তার সঙ্গে পরিচিতি ঘটায় । এককথায় , একজন মানুষ যে বিশাল এই বিশ্বেরই অংশ, সেই ধারণার জন্ম দেয়। এখানেই দেশ ভ্রমণে প্রকৃত সার্থকতা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top