একটি নির্জন দুপুর (A Secluded Afternoon)

বহমান নদীর মত সময়ের বাধা চলিষ্ণু। সকাল হয়, দুপুর বিকালের পাট চুকিয়ে সন্ধ্যা নামে। রাতের কালো পর্দাখানা সরিয়ে ভোরের হাত ধরে আবার সকাল আসে। এভাবে নিরবধি মহাকালের ধারা বয়ে চলে। নিত্যকার গতানুগতিক জীবন যাত্রার প্রতিদিনকার এরকম বিভিন্ন কাল পর্বগুলো কেবল ছায়া ফেলে যায় চলমান ছবির মত।

ভূমিকা

বহমান নদীর মত সময়ের বাধা চলিষ্ণু। সকাল হয়, দুপুর বিকালের পাট চুকিয়ে সন্ধ্যা নামে। রাতের কালো পর্দাখানা সরিয়ে ভোরের হাত ধরে আবার সকাল আসে। এভাবে নিরবধি মহাকালের ধারা বয়ে চলে। নিত্যকার গতানুগতিক জীবন যাত্রার প্রতিদিনকার এরকম বিভিন্ন কাল পর্বগুলো কেবল ছায়া ফেলে যায় চলমান ছবির মত। মনের সিলেটে চক খড়ির তেমন কিছু আঁচড় কাটে না। তারই মাঝে টুক করে কখন কোন কালপর্ব স্মরণীয় হয়ে স্মৃতিতে মোটা রেখার স্বাক্ষর রাখে, তা আগে থেকে আঁচ করা দূর্ভার।এভাবে একটি নির্জন দুপুরে স্মৃতি আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা হয়ে আছে, যার কথা বলার জন্যই প্রবন্ধের এই মুখবন্ধ।

নির্জন দুপুরের ছবি:

সেটা ছিল ঠা-ঠা রোদে পোড়া বৈশাখের এক নির্জন দুপুর। মাথার উপর জলন্ত সূর্য। অগ্নিখরা রোদে পুড়ছে মাঠ-ঘাট সর্বত্র। শত দীর্ণ মৃত্তিকার বুক থেকে উঠছে যেন তাপ দগ্ধ ধরিত্রীর দীর্ঘশ্বাস। তাপদাহের দাপট থেকে পরিত্রান পাওয়ার উদ্দেশ্যে মানুষজন নিয়েছে নিজ নিজ আলয়ে আশ্রয়।

স্বাভাবিকভাবে আমিও আশ্রয় নিয়েছি নিজের শোয়ার ঘরে। শরীরটা বিছানায় আধশোয়া। চোখের সামনে জানালার কপাট আধখোলা। তারই ফাঁক দিয়ে ক্যামেরায় চোখ রাখা দৃশ্যমান ছবির মতো ধরা পড়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ, মাঠ ঘাট ,নদী প্রান্তর। পথঘাট একেবারে জনহীন। শস্যহীন মাঠ ধুধু করছে। গাছ গাছালি যা কিছু চোখে পড়ছে সবই যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে দুঃখ কষ্ট ও যন্ত্রণা সারা শরীরে নিয়ে কি যেন কঠোর তপশ্চর্যার কঠিন পরীক্ষা দিয়ে চলেছে। পাখির কলকাকলি ও কানে আসছে না। হয় তারা পাতার ছায়ায় গা ঢেকেছে নয়তো নিজ নিজ নীড়ে বসে বিকেলের প্রতীক্ষায় প্রতিটি মুহূর্ত গণনা করে চলেছে। কেবল চাতক কাতর গলায় এক ফোঁটা জলের কামনায় রোদেপোড়া আকাশের তলে বৃথাযই উড়ে বেড়াচ্ছে।

একটা ঘুঘু কোথায় কোন গাছের ডালে বসে বড়ই ক্লান্ত স্বরে এমন কাকুতিভরা ডাক দিয়ে চলেছে যে তার ডাক কানে আসতেই মনটা অকারণ ব্যথায় মোচড় দিয়ে ওঠে। দূরের দৃশ্যমান নদীর একটা মোটা রেখার মত নজরে আসছে। তার বালি ভরা ধু-ধু চরটা পড়ে আছে রোদ পিঠ করে। খেয়া ঘাট পার হয়ে যারা ওই চরের বালি ভেঙে মাঠের রাস্তা ধরে পল্লিমুখো হয় তাদের কারওর চিহ্নমাত্র নেই। এরই মাঝে মাঠের প্রান্ত থেকে উড়ছে শুকনোপাতা। খড়কুটো ধুলোবালি নিয়ে ঘূর্ণি বনবন করে ঘুরতে ঘুরতে ছুটছে মাঠের বুক চিরে। ‘ লু ‘ না হলেও গরম বাতাসের হলকা আসছে মাঝে মাঝে পশ্চিমের মাঠ থেকে।

মনের উপর প্রভাব:

তাপ দগ্ধ নির্জন দুপুরের নিসর্গ শোভা দেখতে দেখতে কল্পনার পাখায় ভর দিয়ে মন উড়ে চলে এক স্বপ্নময় জগতে। সে বুঝি ছেলেবেলায় ঠাম্মার কোলে চড়ে বিভোর হয়ে শোনা রূপকথার জগৎ। আমার চোখের সামনে দৃশ্যমান ধুধু মাঠের মতো তেপান্তরের মাঠ। প্রান্তহীন সীমাহীন দিগন্তে বিলীন। পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে যে মাঠ পাড়ি দিয়েছিল রাজপুত্তুর সঙ্গে মন্ত্রীপুত্তুর আর কোটালপুত্তুর। তেপান্তরের পথে কত বিভীষিকা কত ভয়-ভীতি আর শঙ্কা। কিছুই দমাতে পারেনি রাজপুত্তুর আর তার সঙ্গী সহচরদের। অচিনপুরের হাতছানি তাদের টেনে নিয়ে চলেছিল দুর্বার গতিতে দুঃসাহসিক অভিযানে।

রূপকথার জগৎ থেকে এক ঝটকায় আমার মন এসে পড়ে বাস্তবের মাটিতে। মনে হয় জীবনটাই তো তেপান্তরের মাঠের মতো বাধা-বিপত্তি আর বিভীষিকায় ভরা বিপদসঙ্কুল। তা পাড়ি দিতে হলে চাই দূঃসাহস আর দুর্বার গতি। পরক্ষনে মনে আবার পাখা মেলে কল্পনার আকাশে। কত অদেখা মরুপ্রান্তর দূর্গম অরণ্যগিরি ছুঁয়ে ছুঁয়ে কত দুস্তর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অদ্ভূত রোমাঞ্চে শিহরণ জাগে উড়ে বেড়ায়। নির্জন দুপুরের এমনই নানান কল্পনা অতীত স্মৃতি আর অসংলগ্ন কিছু ভাবনা আমার মনকে ভরিয়ে রাখে।

উপসংহার:

দেখতে দেখতে দুপুর সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পরে। বিকেল আসে পথেঘাটে দু-চারজন করে মানুষের আনাগোনা বাড়তে দেখা যায়। আর তখনই কালবৈশাখীর মেঘ উঁকি দেয় আকাশে উত্তর-পশ্চিম কোণে। সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যপটেরঅদ্ভুত পালাবদল ঘটে।দুপুরের নির্জনতাটুকু হারিয়ে যায়। যে দুপুর কে নিয়ে স্বপ্নের জাল বোনা, তাও ছিঁড়ে খান খান হয়ে একটা অস্ফুট বেদনায় বুক টা টনটনিয়ে ওঠে।


Similar Essay (অনুরূপ প্রবন্ধ)

  • একটি গ্রীষ্মের দুপুর রচনা
  • একটি গরমের দুপুর রচনা
  • গ্রীষ্মকালের দুপুর রচনা
  • গ্রীষ্মের একটি তপ্ত দুপুর
  • নির্জন দুপুরে
  • চৈত্রের দুপুর অনুচ্ছেদ রচনা

আরও পড়ুন


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top