একটি প্রাচীন জলাশয়ের আত্মকথা রচনা(Autobiography of an Ancient Reservoir)

আমি ও জনৈক কিশোর

কে তুমি একলা কিশোর এই ঘন দুপুরবেলায় আমার বদ্ধ জলে দিয়ে সুরে ঘুম ভাঙালে ? কি খেলছো ? এদিকে এসো, পুরনো দিনের কথা শোনায় তোমায়।

সময়ের সাথে আমি

পুরনো সব মানুষজন রীতি-নীতি আর এই আমি আমিও তো দেখতে দেখতে অনেক পুরনো হয়ে গেলাম আজ আমার জলে পানা আর মানুষের ফেলা প্লাস্টিক আর অন্যান্য বর্জ্য বোঝাই হয়ে আছে। দেখে বুঝতেই পারবে না আজ থেকে প্রায় 100 বছর আগে যখন আমায় খনন করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তখন এই জল কত স্বচ্ছ আর সুন্দর ছিল।

আমার সোনালী অতীত

এ তল্লাটে সকল মানুষ তখন পানীয় হিসাবে আমার জলকেই ব্যবহার করত আমার পাড় ছিল বাঁধানো চারিদিকে ছিল চারটি সুদৃশ্য ঘাট। সকালে, বিকালে কলসি কাঁখে মেয়েদের চপ্পল হাসিতে শিশুদের কলরালে আরো বয়স্ক মানুষের সমাগমে আমার পাড় গুলি জমজমাট হয়ে উঠত। ওই যে দূরে দেখতে পাচ্ছ ভাঙা অট্রালিকা, এটাই ছিল তখন জমিদার বাড়ি তারা ছিলেন দয়ালু। সাধারণ মানুষের সুখে দুঃখে তারা কখনো মুখ ফিরিয়ে নেন নি। শুনেছি আমরা প্রতিষ্ঠাতার বছরের প্রবাল অনাবৃষ্টি খরা মানুষের দুঃখ দেখে জমিদারের মা ঠাকুরানির আজ্ঞায় আমাকে খনন করা হয়। সেই থেকে আমি কত মানুষের তৃষ্ণা মিটিয়েছি ।কত পাখি, কত মাছ, কত জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ আমার আশ্রয় কত প্রজন্ম পার করে দিল- আমার নিজেরই তো খেয়াল নেই।

সখা বটগাছ

সেই সব দিনের সাক্ষী কেবল ওই বুড়ো বটগাছ ,আমি তার শিকড়ে রস যোগাই, সে আমার বুকে ছায়া ফেলে ।শুনছি জমিদার বংশের উত্তরাধিকারীরা জমি- বাড়ি বেচে দেবে। ওই অট্টালিকা থাকবে না, কাটা পড়বে বুড়ো বটগাছ, আমাকেও হয়তো বুজিয়ে ফেলা হবে।

কিশোরের প্রতি আবেদন

তারপর একদিন, হে কিশোর, এখানে এসে তুমি দেখবে চোখ-বাঁধানো সুদৃশ্য নতুন ইমারত। তার আগে আমার পাশে এসে একটু বোসো আর কান পাতো বুড়ো বটের দীর্ঘশ্বাসে আমার বুকের ওঠা ঢেউয়ের তালে তালে জমা থাকা গল্পগুলো হয়তো শুনে ফেলতেও পারো।


2 thoughts on “একটি প্রাচীন জলাশয়ের আত্মকথা রচনা(Autobiography of an Ancient Reservoir)”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top