ড্রাগের নেশা সর্বনাশা রচনা(Drug Intoxication is a Disaster)

ভূমিকা

বহু সমস্যায় দীর্ণ-বিদীর্ণ  ভারতের ধমনী শোণিত-ধারায় আজ প্রবেশ করছে মৃত্যু-কুটিল-কাল-নাগিনীর বিষ।সুচিন্তিত পরিকল্পনায, সমবেত শুভ প্রয়াস এবং সদিচ্ছার মধ্যস্থতায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা-সমূহের যদিও-বা সমাধান সম্ভব, কিন্তু নবাগত এই কালকেউটের আক্রমণ থেকে সমাজকে বিশেষত সমাজকে রক্ষা করা যাবে কিরূপে? ভারতের লৌহ-বাসরের দুর্নীতির রন্ধ্যপথে যে ভয়ংকরী কালনাগিনী অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তার মৃত্যুময় বিষ-দংশন থেকে আমাদের জাতির লক্ষিন্দরের বাঁচাবো কি উপায়ে?

ভারতে মাদক-দ্রব্য পাচার সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের

স্বাধীনতা লাভের পর সুদীর্ঘ 57 বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। ক্রুর নিয়তির মতো প্রবল বৈদেশিক শক্তির হাত থেকে দারিদ্র্য লক্ষ্য করে একদিকে নিক্ষিপ্ত হয়েছে নানা ভয়ংকর অস্ত্র- সম্ভার অন্যদিকে নিক্ষিপ্ত হয়ে চলেছে ভয়ংকরতর বিষের গলা। ক্র্যাক, কোকেন, হাসিস, মারিজুয়ানা ,ম্যানড্রেকস, এল.এস.ডি .,হিরোইন বা ব্রাউন সুগার ইত্যাদি সেই জীবনাত্মক বিষের গোলা। ভারতের হৃদপিণ্ড- তার বিপুল সম্ভাবনাময় যুব- সমাজই আজ তার লক্ষ্য। তার মধ্যে রয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের বেকার যুবক ,সরকারি-অফিসার, ব্যাঙ্ক কর্মী, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, এমনকি কোনো কোনো পরিবারের গৃহস্থ বধূও।

তৃতীয় বিশ্বের সর্বনাশ সাম্রাজ্যবাদের লাভ

ভারতে মাদকদ্রব্য -পাচার সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের একটি সুনিশ্চিত অঙ্গ ।তৃতীয় বিশ্বে উপনিবেশবাদ বিলুপ্ত হলেও তার ওপর একচ্ছত্র অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভুত্ব- বিস্তারের জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি সদা- সক্রিয়। সংগ্রামী যুব-সমাজই উন্নয়নশীল দেশগুলির আশা-ভরসার স্থল। তাদের মধ্যেই মুক্তি কাঁদে ভাগ্যহত তৃতীয় বিশ্বের। তাদের সেই সংগ্রামী শক্তিকে বিপথগামী করতে পারলে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়ন হবে বিলম্বিত। তাতে দ্বিতীয় বিশ্বের সর্বোচ্চ হলেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পরম লাভ।

ড্রাগ-চালানের মূল লক্ষ্য

আধুনিককালে বাণিজ্যের সঙ্গে সাম্রাজ্যের ‘গান্ধর্ব বিবাহ’ হয়ে গেছ। মনে হতে পারে তৃতীয় মহাযুদ্ধে খেসারত দিতে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদ আজ একেবারে গলিত-নখদন্ত। কিন্তু সাম্রাজ্যও হাতছাড়া হয়ে গেলেও সাম্রাজ্যবাদের দুর্নিবার লোভ-লালসা এবং বিশ্ব দখল ও বিশ্ব শাসন স্পৃহার অবলুপ্ত ঘটেনি।

অর্থনৈতিক প্রভুত্ব -বিস্তার এবং রাজনৈতিক খবরদারি আজ তাদের করতলগত। কে না জানে, বহু শতাব্দী শোচনীয় তারা আজ বিশ্বের প্রভূত পুঁজির মালিক? সদ্য-স্বাধীন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আজ তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সমৃদ্ধ বাজার। অতএব তাও তার মর্মতলে ড্রাগের বিষ ঢুকিয়ে। সে ধুঁকতে থাকুক মৃত্যু-শয্যায়। সেই সুযোগে অর্থনৈতিক শোষণের পাকা ব্যবস্থা করে রাখতে চাই বিশ্বে সাম্রাজ্য হারা বাণিজ্য-সর্বস্ব কূটকৌশলী জাতিগুলি।তৃতীয় বিশ্বের সদ্য স্বাধীন দেশগুলিতে ড্রাগের চোরাচালানের পশ্চাতে রয়েছে সুপরিকল্পিত এক ঘৃণ্য চক্রান্ত। বলাবাহুল্য, ভারত সেই চক্রান্তের প্রধান শিকার।

ড্রাগ চালানোর প্রধান পথ

সেইসব জীবনঘাতি মাদক-দ্রব্য একশো দু’- কোটি জনসংখ্যার উন্নয়নশীল দেশ- ভারতে আসে মধ্য-প্রাচ্য থেকে পাকিস্তান হয়ে। এবং এখানে তার একটা বিরাট অংশ তার শাণিতধারায় ঢেলে দিয়ে চলে যায় মায়ানমারের পথে সিঙ্গাপুর, মিয়ামি ,হংকং। প্রাচীন বিশ্বের ‘রেশম পথ’ [silk route] এর মত একালের এই মাদক -পথ[drug traffic] এর কেন্দ্রবিন্দু ভারত। যারা এই মৃত্যু -ব্যবসায় জড়িত, তারা নিষিদ্ধ পণ্য- পাচারকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডেকে আনে তাদের জীবনে সর্বনাশ। সেই বিয়োগান্ত কাহিনীর অনুযায়ী এবং অশ্রু দিয়ে লেখা। কত পিতা-মাতা অসহায় ভাবে অবশেষে শরণাপন্ন হন মনস্তত্ত্ব বিশারদ সংশোধনব্রতী একশ্রেণীর চিকিৎসকের। কিন্তু কালনাগিনী দংশনে মৃত্যু লক্ষিন্দরের মতো অধিকাংশকেই ভেসে যেতে হলে ভাসানে।

যুব সমাজের মাদকাসক্তির কারণ

নৈরাশ্যের হাত থেকে চির মুক্তি: রাগের এই আক্রমণ থেকে আমাদের যুব- সমাজকে রক্ষা করবার জন্য নির্মাণ করতে হবে আত্মরক্ষা সুদূর দুর্গ – প্রকার। সেজন্য চায় জাতি ঋজু মেরুদন্ড এবং বলিষ্ঠ চরিত্র। স্বাধীনতা সুদীর্ঘ 57 বছরেও জাতির সেই সুদূর চরিত্র গঠিত হতে পারেনি। তার কারণ সর্বক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের যুবসমাজ প্রত্যক্ষ করেছে সহজ প্রতিশ্রুতির সমাধি -শয্যা আর প্রত্যক্ষ করেছে অন্যায়, অবিচার হিংসা ,দুর্নীতি, কপটতা ও সীমাহীন বঞ্চনার স্ফীতকায় রূপ। স্বভাবতই আশা- ভঙ্গের বেদনায় তারা আচ্ছন্ন। নৈরাশ্যের সুতীব্র যন্ত্রণায় তাই তারা বেছে নিয়েছে আত্মবিনষ্টির পথ।

প্রতিকার

কিন্তু এ-পথ তো সর্বনাশের পথ।এ- ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কুম্ভকর্ণের ঘুম এখনো ভাঙে নি। মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণাম এ কত যুবক আজ অকাল- মৃত্যুর দিকে ছুটে চলেছে, কত পরিবার আজ ধ্বংসোম্মুখ। অবিলম্বে তাদের সংশোধন প্রয়োজন। প্রয়োজন সহানুভূতিপূর্ণ চিকিৎসার। সর্বাগ্রে চাই আমাদের যুব -সমাজের সম্মুখে সমুজ্জ্বল আশা এবং বিশ্বাসের নিরাময়।

উপসংহার

এবং তাইই হবে প্রকৃত বিশ্ব চিকিৎসা। কঠোর হাতে যেমন চাই মাদক-দ্রব্যের চোরাই অনুপ্রবেশ বন্ধ করা, তেমনি চায় স্বচ্ছ -পরিচ্ছন্ন প্রশাসন, সমবন্টন ও মানবিক সচেতন আর উদ্বোধন। তবে এই মাদকাশক্তির আক্রমণ থেকে আমাদের যুব সমাজ বাচঁবে, সমগ্র জাতি আসন্ন মহাবিনষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাবে।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top