শুনহ মানুষ ভাই/সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই

এই পৃথিবীতে বহু ভাষাভাষী, বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ আছে। বাইরের আকৃতিতেও তাদের কত পার্থক্য। তবু বাইরের আকৃতিতে মানুষ যতই বিচিত্র হোক না কেন, ধর্ম, ভাষা, সম্প্রদায় যতই বিভিন্ন হোক না কেন, সকল মানুষই মূলত এক। সকল মানুষ এক ধরিত্রী মাতার সন্তান। কিন্তু মানুষ এটা জেনেও নিজের স্বার্থ সিদ্ধি, বিদ্বেষ, হিংসা, লোলুপতা প্রভৃতি পশুবৃত্তি দ্বারা অপরকে করেছে নির্যাতিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, দুঃখিত। এর ফলে এই পৃথিবীর শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। রণক্ষত মানুষের মর্মান্তিক আর্তনাদে আকাশ-বাতাস হয়ে উঠেছে ভারাক্রান্ত। মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃবিরোধ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেড়ে চলেছে। শান্তির বায়ু বিদূরিত হয়ে হিংসার বিষবায়ু পার্থিব পরিবেশকে করেছে আক্রান্ত।

মানুষের এইরূপ আচরণে এক শ্রেণীর মানুষ হচ্ছে শোষিত। হিংসা ও বিদ্বেষের নাগপাশে পার্থিব সমাজ হচ্ছে জর্জরিত ধনী-দরিদ্রে, সাদা-কালোতে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ে নিত্য হানাহানি চলছেই। হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী। মানুষের গড়া জাতিভেদ একে অপরকে হত্যা করেছে। ঈশ্বরের নামে, ধর্মের নামে মানুষ মানুষকে অপমানিত করছে, হত্যা পর্যন্ত করছে। সকল মানুষই যে সমান একথা বহু ক্ষেত্রে মানুষ ভুলে গেছে, এর ফলে পার্থিব ও শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।

হিংসা মানুষের মধ্যে বিভেদের প্রাচীর গড়ে তোলে। এই বিভেদের প্রাচীর জাতি, বর্ণ, ধর্ম, নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে। নিম্নবর্ণের মানুষকে উচ্চবর্ণের মানুষ যদি ঘৃণা করে, এক সম্প্রদায়ের মানুষ আর এক সম্প্রদায়ের মানুষকে যদি অবজ্ঞা করে, তবে মানুষের মনুষ্যত্বই অপমানিত হয়। তাই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষইএই অমৃতের সন্তান এবং সমগ্র পৃথিবীর সকল মানুষ একটি মাত্র মানবজাতি– এই সত্যই প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। খন্ডিত জাতিসত্তা বা সাম্প্রদায়িক সত্তা অখন্ড মানবতায় প্রতিষ্ঠিত হলেই মনুষ্যত্বের সার্থকতা। আজ মানুষের মধ্যে এই চেতনাই জাগাতে হবে যে, মানুষের কোন জাতিভেদ নেই। জাতিভেদ, বর্ণভেদ মানুষেরই কৃত্রিম সৃষ্টি আর এই কৃত্রিম ভেদাভেদ শুধু চিরন্তন মানবসমাজকে কলঙ্কিত করে, যেদিন সবার উপরে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব সর্বজন স্বীকৃত হবে সেদিন মানবতার জয়ে এই বিশ্ব হবে মুখরিত।

x

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Related Posts
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
Scroll to Top