একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় রচনা(A Natural Disaster)

ভূমিকা

মানব সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে প্রকৃতিকে জয় করবার সার্বিক সাধনা মানুষেরে। আর এই সার্বিক প্রচেষ্টা কে বারবার প্রতিহত করছে প্রকৃতির নিষ্ঠুর পদাঘাতে। সভ্যতা উন্নতির সাথে সাথে প্রকৃতির ভয়াল ও রুদ্র রূপ সভ্যতার ইতিহাসে বারবার প্রত্যক্ষ করছি। তাই সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ঘূর্ণিবত এবং ভূমিকম্প মানুষকে বিপর্যয়ে ঠেলে দিচ্ছে। অসংখ্য মানুষের জীবনকে ছিনিয়ে নিচ্ছে প্রকৃতির রূপ। খাদ্য, বাসস্থান, সরকারি সাহায্যের অপ্রতুলতা প্রভৃতি পরিবেশকে আরো ভয়ঙ্কর করে তুলছে। ভূমিকম্প সবচেয়ে বড় নিষ্ঠুর প্রাকৃতিক খেলা প্রাকৃতিক বিপর্যয় কে মানুষ এখনও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

ভূমিকম্পের কারণ

পৃথিবীর উপরিভাগ সংকোচন ও প্রসারণের ফলে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরভাগে যেসব তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ ছিল তা ভূপৃষ্ঠের বাইরে এসে বাতাসের সংস্পর্শে কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। এইসব পদার্থ হল লাভা, হঠাৎ স্থান পরিবর্তনের ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। কম্পনের তীব্রতা যত বেশি হবে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ তত বেশি হবে। আবার ভূ-অভ্যন্তরের শিলা চ্যুতির ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। পার্বত্য অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের ধ্বস নামলে বা হিমবাহ সম্প্রপাতের ফলে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। আধুনিক ভূ-তাত্ত্বিকরা মনে করেন ভূ-ত্বক সঞ্চরণশীল প্লেট বা পাতের সমন্বয়ে গঠিত দুটি সঞ্চরণশীল প্লেট কাছাকাছি এলে শিলাচ্যুতি ঘটে ফলে ভূমিকম্প হয়।

গুজরাটের ভূমিকম্প

২০০১ সালে ২৬ শে জানুয়ারি সকাল ৮.১৫ মিনিটে ভারতের ৫২ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে ভুজ, আমেদাবাদের কিছু অংশে নেমে এসেছিল এক মর্মান্তিক করুন কাহিনী। ধরণীর বুকে নেমে এসেছিল এক ভয়াবহ ভূমিকম্প। ছিনিয়ে নিয়েছিল শতশত মানুষ, তরুণ তাজা প্রাণ। ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপার যন্ত্র রিকটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৬.৫। সারা পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মাটি কেঁপে উঠেছিল। শতাব্দীর ভয়ংকরতম এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভুজ। গুজরাটের ভুজ অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সর্বাধিক।

অভিশপ্ত সময় টি দেশের প্রজাতন্ত্র দিবসের সকাল। ফলের বেশিরভাগ মানুষ ছিল ঘরের মধ্যে। বাড়ির স্কুলের ছেলেমেয়েরা বেরিয়েছিল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রভাতফেরিতে। সবাইকে সচকিত করে বহুতল বাড়ি গুলো দুলতে থাকে আকর্ষিক ঝড়ের দোলায়। ভূ-তত্ত্ববিদরা বলেন প্রকৃতির পাগলামির মধ্যে আছে এক অন্যান্য ব্যাকরন। যাকে বলে ‘মেথড ইন ম্যাডনেস’। নদীর ঢেউয়ের মতো চৌচির হয়ে যায় শহরগুলো, রাস্তার গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হঠাৎ লাফাতে থাকে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়, রেল, সড়কপথ বিপর্যস্ত হয়। বিদ্যুৎ, টেলি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। বাড়িগুলো মাটির পুতুলের মতো ভেঙে পড়ে। যারা বেঁচে ছিল তারা আশ্রয়ের জন্য চারিদিকে ছুটাছুটি শুরু করে খোলা আকাশের নিচে।

সরকারী ও বেসরকারী এবং বিশ্বব্যাপীর সাহায্য

জীবনের কলহাস্য মুখর অঞ্চলটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে পরিনত হলো আর্ত,পীড়িত মানুষের হাহাকারময় ক্রন্দন – কলরোলে। মুহূর্তের মধ্যে ভুজ শহর পরিণত হল শ্মশান পুরীতে। পৃথিবীর মানচিত্রে এটি স্থান করে নিল। ভুজ ও আমেদাবাদ শহরের ক্ষয়ক্ষতি,প্রাণহানিও ধ্বংসলীলা সারা পৃথিবীতে স্বন্ত্রস্ত করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স অর্থ সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। অন্যদিকে উদ্ধার কার্য সম্পন্ন করার জন্য উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপকভাবে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী ও উদ্ধারে ও ত্রাণে তৎপর। খাদ্য, পোশাক, পানীয় জল, চিকিৎসা, অস্থায়ী বাসস্থানের জন্য ত্রিপল প্রভৃতি সরবরাহ করা হয়েছে। ঠিক কত সংখ্যক লোক মারা গিয়েছে তা সঠিকভাবে বলা অসম্ভব। শত শত শব গনসৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রেডক্রশ, সেন্টজন অ্যাম্বুলেন্স প্রভৃতি জনকল্যাণ প্রতিষ্ঠানগুলো সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। সারা বিশ্ব আজ ত্রাণের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, জার্মানি, কানাডা, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক, জাপান, সুইজারল্যান্ড এমনকি পাকিস্তান থেকে ও বিভিন্ন খাবার, চিকিৎসক দল এসেছে। ত্রাণ ও পুননির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক দিয়েছে ঋণের প্রতিশ্রুতি। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল নামে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। এই তহবিলে জনসাধারণকে মুক্তহস্তে দান করবার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। অবশ্য ভারতবর্ষের প্রতিটি অঞ্চল থেকে প্রভূত সাহায্য ও সহমর্মিতা গুজরাট বাসীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা

যেসব এলাকা ভূমিকম্প প্রবণ সেইসব এলাকাতে বাড়িঘর জাপানি ঘর নির্মাণ পদ্ধতিতে গ্রহণ করা উচিত। সরকারকে ভবিষ্যতে গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে বা আবাসন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সঠিক এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। বড় বড় বাড়ি তৈরীর ক্ষেত্রে প্রমোটাররা যাতে মুনাফা বাজি করে মৃত্যুফাঁদ তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

উপসংহার

সহযোগিতাই অগ্রগতি, বিচ্ছিন্নতাই ধ্বংস। নিয়তিকে কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না। প্রতিযোগিতার যুগে ভূ-গর্ভে পরীক্ষামূলক আণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এইসব বিস্ফোরণের ফলে ভূগর্ভের স্তরবিন্যাস পরিবর্তিত হচ্ছে। বিজ্ঞান যতই প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে প্রকৃতি ততই অধরা ও অজ্ঞেয় থেকে যায়। বিভেদের অন্ধকার দূর হোক। প্রকাশ হোক সত্য সূর্যের

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top